ভিডিও

কাসুন্দিতে স্বাবলম্বী বেড়ার নারীরা 

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৪, ০৪:০১ দুপুর
আপডেট: মে ১৮, ২০২৪, ০৪:০৩ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

আবুল কালাম আজাদ, বেড়া (পাবনা): প্রত্যেক রসনাবিলাসী বাঙালির কাছেই কাসুন্দির দারুণ কদর। কাঁচা-পাকা আম, মুড়ি কিংবা ভাতে মেখে সুস্বাদু ও মুখরোচক এই মশলা জাতীয় খাবারটির স্বাদ গ্রহণের সুযোগ কেউই ছাড়েন না। যদিও কাসুন্দি তৈরিতে দক্ষতার পাশাপাশি পোহাতে হয় নানা ঝুট-ঝামেলা। এ জন্য ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেকেই এটি তৈরি করতে পারেন না এই মুখরোচক মশলা জাতীয় খাবারটি। কিন্তু তাই বলে মৌসুমী এই খাবারটির স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন মানুষ? মোটেই না। তাদের জন্য বেড়া পৌর এলাকার মৈত্রবাঁধা ও শেখপাড়া মহল্লার নারীরা বাণিজ্যিকভিত্তিতে তৈরি করছেন কাসুন্দি। এতে এ গ্রাম দুটিসহ পার্শ্ববর্তী আরও দুটি গ্রামের প্রায় দুই শ নারী কাসুন্দি তৈরি ও বিক্রি করে তাদের সংসারে আনছে সচ্ছলতা।

কাসুন্দি হলো একটি মৌসুমী মশলা জাতীয় খাবার। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসে মূলত এর চাহিদা বেশি থাকে বলে এই দুমাসকে কাসুন্দি মৌসুম বলা হয়ে থাকে। কাসুন্দি মৌসুমে মৈত্রবাঁধা অথবা শেখপাড়া গ্রামে গেলে দূর থেকেই ভেসে আসে ঢেঁকির শব্দ। গ্রামে ঢুকে দেখা যায় এ বাড়ি নয়তো ও বাড়িতে চলছে কাসুন্দি তৈরির কাজ । কোনো বাড়িতে হয়তো ঢেঁকিতে গুঁড়ো করা হচ্ছে রাই-সরিষাসহ বিভিন্ন রকমের মশলা। কোথাওবা সেসব মশলা ও রাই-সরিষার গুঁড়ো গরম পানিতে গুলিয়ে তৈরি হচ্ছে কাসুন্দি। আবার কোথাও রোদে শুকোনো হচ্ছে কাসুন্দি তৈরির নানা উপকরণ। যে বাড়িগুলোতে কাসুন্দি তৈরি হয় সেখানে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত দেখা যায় কাসুন্দির পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়। এসব ক্রেতাদের বেশির ভাগই হচ্ছে নারী। একই গ্রাম অথবা আশেপাশের গ্রামগুলোতে তাদের বাড়ি। পাইকারি দরে কলস অথবা ডেকচিভর্তি কাসুন্দি কিনে তারা বিক্রির জন্য বেরিয়ে পড়েন কাছে বা দূরের বিভিন্ন গ্রামে। দিনভর ফেরি করে সেই কাসুন্দি বিক্রি করেন তারা।

কাসুন্দি তৈরির সঙ্গে জড়িত নারীরা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে মৈত্রবাঁধার গঙ্গারাণী নামের এক নারী এই এলাকায় কাসুন্দি তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। বয়সের ভারে এখন আর তিনি কাসুন্দি তৈরি করেন না। তবে তাঁর কাছ থেকে জানা যায় কাসুন্দি তৈরির কলাকৌশল।  তিনি জানান, কাসুন্দি তৈরির প্রধান উপকরণ হল রাই (সরিষা)। এ ছাড়া আরও লাগে জিরা, হলুদ, শুকনো মরিচ, জাউন, সলুপ, ধনিয়া, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা। রাইসহ মশলাগুলো প্রথমে কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। তারপর সেগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে ঢেঁকিতে গুঁড়ো করে নিতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে ফুটানো গরম পানির সঙ্গে প্রথমে রাইয়ের গুঁড়ো মেশাতে হয়। পরে তাতে লবণসহ গুঁড়ো করা মশলাগুলো পরিমাণ মতো মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয় সুস্বাদু কাসুন্দি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে দুই গ্রামের ১০-১৫টি বাড়িতে চলে কাসুন্দি তৈরির কাজ। কাসুন্দি তৈরির পর পাইকারি বিক্রির কাজে বাড়িগুলোর নারীরাই মূলত জড়িত। তবে বাড়ির পুরুষেরা বাজার থেকে কাসুন্দি তৈরির উপকরণ কিনতে সহায়তা করে থাকেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে কাসুন্দি মৌসুম এলেই কাসুন্দি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন শতাধিক নারী। কাসুন্দি মৌসুমে সব বাদ দিয়ে প্রতিজনের আয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এতে কাসুন্দি পেশার সঙ্গে জড়িত নারীরা পাচ্ছেন বাড়তি সচ্ছলতা। এক সময় কাসুন্দি বিক্রির কাজে শুধু নারীরা জড়িত থাকলেও বেশি লাভ দেখে এখন অনেক পুরুষও এতে অংশ নিচ্ছে।

কাসুন্দি তৈরির সঙ্গে জড়িত শেখপাড়া গ্রামের আনু খাতুন (৪০) ও আজমিরি খাতুন (২৭) আফশোস করে জানান, দুই মাস না হয়ে সারা বছর ধরে তারা যদি কাসুন্দি তৈরি করতে পারতেন তবে বাড়িতে দালান দেওয়া যেত। তবে অল্প সময়েই তারা যা আয় করেন তাতে বছরের বাকি মাসগুলো খুব ভালোভাবে কাটে তাদের। 

ফেরি করে বিভিন্ন গ্রামে কাসুন্দি বিক্রি করেন মৈত্রবাঁধা মহল্লার নূরি বেগম (৫৫)। তিনি বলেন, ‘আমাগরে গিরামের কাসুনের (কাসুন্দি) সুনাম দূর-দূরান্তে ছড়ায়া গ্যাছে। এই কাসুন বেচার জন্যে একদিকে পাবনা, আরেক দিকে সেই শাহাজাদপুরের (সিরাজগঞ্জ) নানা জায়গায় যাই। সব বাদ দিয়্যা দৈনিক গড়ে তিন শ টাকার মতো লাভ থাকে। মৈত্রবাঁধা মহিলা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিখা রায় বলেন, ‘কাসুন্দি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত নারীদের প্রত্যেকেই দরিদ্র। সারাবছর ধরে তারা কাসুন্দি মৌসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কারণ কাসুন্দি মৌসুমে তারা যা আয় করেন তাতে তাদের সংসারে সচ্ছলতার পাশপাশি অভাব অনেকটাই দূর হয়।’



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS